তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ জাকির হোসেন-টুটুল।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা জাতীয়তাবাদী (যুবদল) নেতা শরিফ উদ্দিন মুন্সীর ভূমিদস্যুতা ও দখলবাজিতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিএনপি’র প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসার সংকট দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জুলাই বিপ্লবের পর পরই তিনি (যুবদল) নেতা শরিফ উদ্দিন মুন্সী মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিনের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে জনমনে তীব্রক্ষোভ ও চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তার এসব নানা অপকর্মের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে তানোর উপজেলা জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি (সোমবার) তানোর উপজেলার ৬নং কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি)
মালশিরা গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির চাতাল জবরদখল করা হয়েছে।
এতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষের পাশাপাশি চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এদিন রাজশাহী জেলা যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন মুন্সী বহিরাগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে (স্বামীর) অপরাধে” স্ত্রী ও পুত্রের জমি জবরদখল করেছে।
এ ঘটনায় গত ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মালশিরা গ্রামের দিলিপ কুমার মন্ডলের ছেলে সেতু কুমার মন্ডল বাদি হয়ে ভবানীপুর গ্রামের মৃত বদু হাজির ছেলে ও জেলা যুবদল নেতা শরীফ উদ্দিন মুন্সীকে বিবাদী করে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর-১৮৪, মালশিরা মৌজার, খতিয়ান নম্বর ৩১৬, দাগ নম্বর ৬৬৩ ও ৬৬৪, শ্রেণী চাতাল, পরিমাণ ২০.৩৩ শতক। গত ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর রেজিষ্ট্রি দলিলের মাধ্যমে দিলিপ কুমারের কাছে থেকে ক্রয় করেন তার স্ত্রী শ্রীমতি লিপি রানী ও পুত্র সেতু কুমার মন্ডল। উক্ত সম্পত্তির উপর চাতাল নির্মান রয়েছে। বর্তমানে উক্ত চাতাল বিবাদী জোরপূর্বকভাবে দখল করেছে।
স্থানীয়রা জানান, ইতিপূর্বে তানোর পৌরসভার গোকুল গ্রামে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত কর্মীসভায় মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিন কে প্রধান অতিথি করায় কর্মীসভা পন্ড করেছিল শরিফ মুন্সী।
এছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি এ্যাডঃ সুলতানুল ইসলাম তারেকের মাদারীপুর কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে হামলা ও নেতাকর্মীদের মারপিট করার অভিযোগ রয়েছে শরিফ উদ্দিন মুন্সীর বিরুদ্ধে।
এমনকি গত ১৬ মে (শুক্রবার) বিকেলে শরিফ উদ্দিন মুন্সীর নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী চৌবাড়িয়া গরু হাট থেকে গরু ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলামকে লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। এমনকি তাকে প্রায় দ্বিগম্বর করে টেনে হিচড়ে পাশের নলপুকুরিয়া এলাকায় নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে তার কাছে থেকে গরু বিক্রির টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আহত সাইফুলের পুত্র প্রত্যক্ষদর্শী সজিব ও ভাগ্নে এনামুল জানান, তিনি হাটে ৬টি গরু বিক্রি করতে যান। পাঁচটি গরু বিক্রি হয় এমতাবস্থায় শরিফ মুন্সীর নির্দেশে হামলাকারীরা তার উপর হামলা করে তার কাছে থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, কামারগাঁ ইউপি বিএনপির
বিঁষফোড়া শরিফ উদ্দিন মুন্সী। তিনি এর আগে বিএনপি নেতা এ্যাডঃ সুলতানুল ইসলাম তারেকের নেতাকর্মীদের সঙ্গে
সংঘর্ষ বাঁধিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করেছে। এছাড়াও দলের নাম ভাঙিয়ে জমিদখল, আলুর জমি টেন্ডার নিয়ে কৃষকদের টাকা নয়ছয়,গভীর নলকুপে অপারেটর নিয়োগে বানিজ্যে ও মুন্ডুমালা
পশুহাটে হাসিল আদায়ের নামে সরব চাঁদাবাজিসহ তার ইত্যাদি অপকর্মে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত রমজান মাসে ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে পাঁচন্দর ও চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নে (ইউপি) বিএনপির দুটি গ্রুপের পৃথক সংঘর্ষে দুই বিএনপি নেতার মৃত্যু ঘটে। আর এসব সংঘর্ষের উসকানিদাতা হিসেবে শরিফ মুন্সীর কথা শোনা যাচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন মুন্সী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি দিলিপ কুমার মন্ডলের কাছে থেকে জায়গা কিনেছেন এখানে জবরদখলের কিছু নাই। দিলিপ তাকে জায়গা বুঝে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দিলিপের জায়গা কোথায় সেটা দিলিপ তাকে বুঝিয়ে দিক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সেতু কুমার মন্ডল বলেন, তার বাবার সঙ্গে শরিফ উদ্দিন মুন্সীর কি হয়েছে, সেটা তাদের বিষয়। কিন্ত্ত বাবার অপরাধে তো স্ত্রী-পুত্রের জমি জবরদখল করা যায় না। তারা তাদের জমি ফিরে চান।