মীর শরিফুল ইসলাম চৌধুরী , জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ইউনিয়ন বিএনপির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে চরম অনিয়ম, ভোট ডাকাতি, হুমকি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন এবং সহকারী নির্বাচন কমিশনার নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। শনিবার (১৪ জুন) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার রিফাইতপুর বাজারস্থ বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন।
দুজনই বর্তমানে দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন—আলতাফ হোসেন সিনিয়র সদস্য এবং নুরুজ্জামান হাবলু যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পেলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনায় তাঁরা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন।
তাঁদের অভিযোগ, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র তিনটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে একতরফা ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে, জাল ভোট দেওয়া হয়েছে, ভোটকেন্দ্র দখল করে পেশিশক্তির মাধ্যমে জোরপূর্বক ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে গুরুতর আহত করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগপন্থী ব্যক্তিদেরকেও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
তাঁরা আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরকে হুমকি দিয়ে জোর করে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এসব অনিয়মে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা ও তাঁর অনুসারীরা।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ ছিল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলতাফ হোসেনকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছে, যার ফলে তিনি ও তাঁর সহকারী নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করেন এবং বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট রমজান আলী, আবিদ হাসান মন্টি সরকার, সেন্টু খানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাঁরা এই পদত্যাগকে অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, দলীয় নেতৃত্বে স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব এখন প্রকট হয়ে উঠছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দৌলতপুর বিএনপির রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এটিকে দলীয় গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছেন। এ পদত্যাগ দলীয় অভ্যন্তরীণ সংকটের গভীরতা এবং নেতৃত্বের দিকনির্দেশনার ঘাটতিরই ইঙ্গিত বহন করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।