মোঃ ইকরামুল হক রাজিব বিশেষ প্রতিনিধি
গরিবের হক কেড়ে খাওয়ার দিন কি এখনও শেষ হয়নি?”—এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বাগেরহাটের ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ একটি সেবা নিতে গিয়ে বারবার হয়রানি আর অর্থ দাবি—এ যেন সাধারণের জীবনে আরেক নতুন দুর্ভোগের নাম।
সদর ইউনিয়নের ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুহাম্মাদ এহসানুল হাসান এর বিরুদ্ধে একাধিক ঘুষ গ্রহণ, অর্থ আত্মসাত এবং প্রশাসনিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে গিয়ে বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হচ্ছে, নয়তো দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকেন এই কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী আফরোজা বেগম জানান, “আমার দুলাভাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া সেই সময়, মৃত্যুর পাঁচ দিন পর আমি মৃত্যু সনদ নিতে গেলে এহসান সাহেব ১০০ টাকা চান। ভাগ্নের জন্মসনদের জন্যও আরও ১০০ টাকা চেয়েছিলেন। আমি টাকা দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। পরে জানতে পারি ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু সনদ নিতে কোনো টাকা লাগে না। টাকা ফেরত চাইলে তিনি প্রথমে আমাকে রুম থেকে বের করে দেন। পরে বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলামকে জানালে তারপর এহসানুল হাসান আমার টাকা ফেরত দেন।”
আফরোজা বেগম বলেন, “আমি চাই, আর কোনো মানুষ যেনো এমন হয়রানির শিকার না হন। এটা শুধু একটা টাকার বিষয় নয়, এটা মানবিকতার প্রশ্ন।”
একই রকম অভিযোগ তুলেছেন হামিম হোসেন নামের আরেক যুবক। তিনি জানান, “আমি জন্মনিবন্ধন করতে গেলে কয়েকদিন ঘুরানোর পর টাকা দাবি করেন এহসান সাহেব। টাকা দেওয়ার পর জন্মনিবন্ধন হয়, কিন্তু সেখানে আমার বাবাকে মৃত দেখানো হয়েছে—যদিও তিনি এখনো জীবিত। আমি এর কঠোর বিচার চাই।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, মুহাম্মাদ এহসানুল হাসান পূর্বের কর্মস্থলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অথচ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তার কাছেই যদি সাধারণ মানুষ এভাবে প্রতারিত হন, তাহলে কোথায় যাবে ন্যায়বিচার?
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মুহাম্মাদ এহসানুল হাসান বলেন, “কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে। আমি আফরোজার কাছ থেকে ভুল করে টাকা নিয়েছিলাম, পরে ফেরত দিয়েছি।”
তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আইরিন। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি জেনেছি, অতি দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সেবার নামে হয়রানি, ন্যায্য অধিকারের বদলে ঘুষের দাবি—এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ হবে আতঙ্কের নাম। দুঃখজনক হলেও সত্য, একজন সরকারি কর্মচারীর অনিয়মের দায় কখনো পুরো ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। সময় এসেছে প্রশ্ন তুলার, এবং সেইসাথে প্রতিকার চাওয়ার।