মোঃ ইকরামুল হক রাজিব বিশেষ প্রতিনিধি

নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগে গত বুধবার রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থানরত তিন শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। আটক তিনজন হলেন আল সাদি পিয়াল, মীর আসাদ আল রহমান সায়েম, তৌফিক ই মওলা। পরে এক শিক্ষার্থীকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই মর্মে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

যদিও আটকের পর প্রাণের ভয়ে দেওয়া জবানবন্দিতে আল সাদি পিয়াল স্বীকার করেন যুবদল নেতা কৃষিবিদ সানোয়ারের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে দীর্ঘদিন অবস্থান করছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্রদল নেতা কৃষিবিদ কে এম সানোয়ারের সুপারিশের ভিত্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। মিথ্যাচার করা হচ্ছে আল সাদি পিয়াল ময়মনসিংহের হওয়ায় সানোয়ার আলম সুপারিশ করেছেন তার অঞ্চল হিসেবে। বাস্তবতা হলো সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান যুবদল নেতা সানোয়ার আলমের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছেন সানোয়ারের বিরুদ্ধে। কেননা ষড়যন্ত্রকারীদের চেয়ে সানোয়ার আলম রাজনীতিতে বেশি জনপ্রিয় নেতা হিসেবে অগ্রগামী। বিএনপির কেন্দ্রীয় বেশকয়েকজন নেতার আস্থাভাজন হিসেবেও স্নেহ পাচ্ছেন। তাই প্রতিপক্ষরা মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন যে, আল সাদি পিয়ালকে হলে অবস্থান ও পুলিশের আটক থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করেছেন সানোয়ার আলম।

এদিকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে আল সাদি প্রিয়াল নিজেই এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ‘গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে প্রায় ১ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই ছিলাম। আমার গ্রেজুয়েশন শেষ করেছি মাস্টার্স শুরু হয়েছে। এতো দিন কোনো সমস্যা হয়নি কিন্তু গত ৩০ জুলাই রাতে হঠাৎ করে কিছুসংখ্যক ছেলে হলে এসে আমাকে ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ থানায় নিয়ে আমাকে জেরা করে তথ্য উপাত্ত যাচাই তদন্ত করেন। তখন আমি পুলিশকে অবহিত করেছি যে; ২০২১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। এমনি পুলিশ আমার ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেঞ্জার ঘেটে কোনো আলামত পায়নি। ফলে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছে যখন আমাকে তুলে দেওয়া হয় তখন আমার গায়ে হাত তোলা হয়; পরবর্তীতে আমি ভয়ে এক জনের নাম বলি- কারণ হলে থাকার সময় এক বড় ভাই আমাকে বলেছিলো হলে থাকতে তোমার যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে সানোয়ার নামে একজন নেতা আছে তার নাম বলিও। আমি যখন পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাই তখন আমাকে ভিন্ন সাইট থেকে ফোন কল দিতে থাকে যে আমাকে সানোয়ার ভাই ছাড়িয়েছে কিনা? বা আম টাকা পয়সার লেনদেন করেছি কিনা? সত্য হলো সানোয়ার ভাইকে আমি ঠিক ততটা চিনি না। তার সঙ্গে আমার যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থাও নাই। ফোন নম্বরও আমার কাছে নেই। কোনো দিন কথাও হয়নি দেখাও হয়নি। আমি যতটুকু জানতে পারলাম সে (সানোয়ার) বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র একজন, সাবেক ছাত্রদল নেতা। তার সঙ্গে আমার কোনো যোগসূত্র নেই। তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।

আল সাদি পিয়াল ছাড়া পাওয়ার বিষয় শেকৃবি ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমরাও ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা সানোয়ার ভাইয়ের সহযোগিতার গুঞ্জন শুনেছি, যা আমাদের কাছে অসত্য মনে হয়েছে। কেননা সানোয়ার ভাই নিজেও দুঃসময়ের কর্মী, তিনি কোনো ছাত্রলীগ কমীকে আশ্রয় দিবেন এমনটা বিশ্বাস করি না। তবে আমি ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার মূল দায় পুলিশকে দিতে চাই।’

জানতে চাইলে যুবদল নেতা সানোয়ার আলম ভিওডি বাংলাকে বলেন, আটক ছাত্রলীগ নেতা আল সাদি প্রিয়াল আমার সুপারিশে পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়েছে এবং সে আমার সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করছে—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আল সাদি প্রিয়াল নামক কতিপয় ব্যক্তির সঙ্গে আমার কোনো প্রকার ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক পরিচয় নেই। আমি কখনোই থানায় তার বিষয়ে কোনো সুপারিশ করিনি এবং হলের বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করিনি।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে রাজনীতির সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে আমি কখনোই ফ্যাসিবাদ বা তার অনুসারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারি না, করিনি এবং করব না। কারণ ফ্যাসিস্ট হাসিনার রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ততার কারণে একাধিকবার শারীরিক নির্যাতন,রিমান্ড এবং কারাভোগের শিকার হয়েছিলাম। সুতরাং এই মিথ্যা সংবাদটি আমার রাজনৈতিক অবস্থান, ব্যক্তিত্ব এবং দীর্ঘ দিনের সংগ্রামী চেতনায় কালিমা লেপনের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এক প্রশ্নের জবাবে কে এম সানোয়ার আলম বলেন, ‘আমার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালের কোনো যোগসূত্র থাকার কথা নয়, সেখানে পুলিশের নিকট হতে ছাড়ানোর কথা তো দূরের বিষয়। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালের আমার বিরুদ্ধে যে জবানবন্দীর ভিডিও এসেছে তা জোরপূর্বক কিংবা যড়যন্ত্রমূলক ভাবে হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত সত্য বের হবে।’

শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমামউল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগের পোস্টধারী দুইজন নেতাকে শেকৃবি ক্যাম্পসের ছাত্রদল নেতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের হাতে তুলে দেয়। তদের বিরুদ্ধে মূলত বিভিন্ন ঝটিকা মিছিল এবং অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে যা বর্তমানে তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।