প্রতিবেদক:
মীর শরিফুল ইসলাম চৌধুরী
প্রতিবেদন:
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে বিয়ের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সামিহা খাতুন নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত সামিহা একই উপজেলার আলাউদ্দিনপুর গ্রামের সফিউদ্দিনের মেয়ে। স্বজনদের অভিযোগ—স্বামী জীবন হোসেন, শ্বশুর সাহেব আলী ও শাশুড়ি নাজমা খাতুন তাকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্কের পর ছয় মাস আগে সামিহা খাতুন ও জীবন হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সামিহার উপর বিভিন্ন ধরণের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। সামান্য বিষয় নিয়েও তাকে প্রায়ই মারধর করা হতো। বিশেষ করে আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সাংসারিক সামগ্রী বাবার বাড়ি থেকে এনে দিতে চাপ দেয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। সামিহার পরিবার দাবি করেছে, এসব বিষয় নিয়েই শুক্রবার রাতেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়।
পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয়রা সামিহার মরদেহ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রথমে এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করে। তবে সামিহার স্বজনরা গিয়ে মরদেহের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে নিশ্চিত হন যে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
খবর পেয়ে কুমারখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রকাশ চন্দ্র বাছাড় জানান, “মরদেহের শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয়েছে।”
এদিকে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী জীবন হোসেন, শ্বশুর সাহেব আলী এবং শাশুড়ি নাজমা খাতুন সবাই গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত সামিহার বড় বোন সাকিবা খাতুন বলেন, “প্রেমের সম্পর্কের কথা বলে ওকে জোর করে বিয়ে করেছিল জীবন। বিয়ের পর থেকেই ওকে নানা সময় মারধর করত। আসবাবপত্র না দেয়ার কারণেই এখন আমার বোনকে মেরে ফেলেছে।” তিনি আরও বলেন, “মরদেহ দেখে আমাদের আর বুঝতে বাকি নেই— এটা আত্মহত্যা নয়, নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।”
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।