শ্রীপুর গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে ৯ মাস ধরে বাঁশের বেড়া দিয়ে এক বিধবা ও তার পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মই দিয়ে টিনের চাল বেয়ে উঠা নামা করেন তারা। অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামে।
ভুক্তভোগী বিধবা সামসুন্নাহার। সরেজমিন দিয়ে দেখা যায়, সাড়ে ৩ শতাংশ জমির উপর টিনশেড ঘর। বাড়ির চারপাশে বাঁশের বেড়া। চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় পরিবারটি কার্যত গৃহবন্দী। টিনের চালার দুই পাশে দুইটি বাঁশের তৈরি মই দিয়ে অতি কষ্টে উঠা-নামা করে তারা।
ভুক্তভোগী শামসুন্নাহার জানান, ২০০৬ সালে আমিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শামসুন্নাহার মৃত আবুল হাসেমের ছেলে আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে সাড়ে তিন শতাংশ জমি ক্রয় করে বসতবাড়ি নির্মাণ করেন। তবে ২০২০ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে আমিরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে বিধবা শামসুন্নাহার তিনটি কক্ষ ভাড়া দিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, জমি বিক্রেতা আমজাদ হোসেন চলতি বছরের ৫ আগস্ট থেকে বাড়িটি দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে নানা ভয়ভীতি, হুমকি ও মারধর শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তিনি ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে বাড়ির চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ফলে শামসুন্নাহার ও তার দুই ছেলে শাইফুল ইসলাম দিপু (২২) এবং শাইমুন ইসলাম ইপু প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির পেছনের দেয়ালে মই বেয়ে যাতায়াত করছেন।
ভুক্তভোগী শামসুন্নাহার অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার গহনা বিক্রি করে এ জমিটা কিনেছিলাম।স্বামী মরার পর থেকে অত্যাচার শুরু হয়। জমি নেওয়ার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমাকে মেরে আহত করেছে। গত সরকার পতনের পর বাড়ির চারপাশে বেড়া দেয় তারা। এখন আমরা কার্যত বাড়িতে বন্দী। বাড়ির ভাড়াটিয়া চলে গেছে। ছেলে গার্মেন্টস-এ কাজ করতো, তা-ও করতে পারছে না। খেয়ে না খেয়ে আছি। যদি বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাটা পেতাম, তাহলে বেঁচে যেতাম। থানায় গেছি, ইউএনও অফিসেও গেছি— কিন্তু কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।
এ ঘটনায় শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েও কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। সহযোগিতা চেয়ে একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েও প্রতিকার পাননি। মানবেতর জীবনযাপন করা পরিবারটি দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
ভুক্তভোগীর শামসুননাহারের পুত্র সাইফুল জানান, তিনি গার্মেন্টস-এ চাকুরী করতেন।তার মাকে মারধর করার পর চাকুরী ছেড়ে দিয়ে মাকে পাহাড়া দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যরিষ্টার সজীব আহমেদ জানান, আমার কাছে এসেছিল। জমি নিয়ে ঝামেলা আছে। কারও ব্যাক্তগত জমি দিয়ে রাস্তা না দিলে আমার কী করার আছে? তারপরও দেখছি কী করা যায়।