
এনায়েত করিম রাজিব বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
হোয়াইট ফ্লাই (সাদা মাছি) পোকার আক্রমনে ফলন আশংঙ্কাজনক কমে যাওয়াসহ উৎপাদিত নারকেলের উচ্চ মূল্য থাকায় গত কয়েক বছরে বাগেরহাট জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৯৯টি অটো নারকেল তেলের মিল। নারকেল সংকটের মধ্যে বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীতে এখন ১০টি অটো নারকেল তেলের মিল ধুকে ধুকে চলছে।
সত্তর শতাংশ উৎপাদন কমে যাওয়ায় শুধুমাত্র নারকেল ফসলের উপর নির্ভরশীল চার লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকায় ও দেখা দিয়েছে অচলবস্থা। বিসিক, কৃষি বিভাগ ও অটো নারকেল তেল মিল মালিক সমিতি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বাগেরহাট কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় ৯টি উপজেলার নারকেল গাছে আশংঙ্কাজনক হারে হোয়াইট ফ্লাই পোকার আক্রমন শুরু হয় ২০১৯ সাল থেকে। এরপর থেকে বাগেরহাটে নারকেল উৎপাদন আশংঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে। নারকেল গাছে সাদা সাদা পোকের কারনে গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। নারকেল গাছের মাথা মরে যাচ্ছে। গত অর্থ বছরে (২০২৩-২০২৪) বাগেরহাটে ৩ হাজার ৬৫৪ হেক্টর বাগানে মাত্র ৩৩ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন নারকেল উৎপান হয়। কৃষি বিভাগের এই তথ্যের সাথে একমত নয় বিসিক ও জেলা নারকেল তেল মিল মালিক সমিতির নেতারা। বাগেরহাট জেলা নারকেল তেল মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. শেখ জবেদ আলী জানান, এক সময়ে এই জেলায়ই লক্ষাধিক মেট্রিক টন নারকেল উৎপান হত।
উৎপাদিত এসব নারকেলের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল ১০৯টি অটো নারকেল তেল মিল। পোকার আক্রমনে ২০১৯ সাল থেকে নারকেল উৎপাদনে ধ্বস নামে। এখন জেলায় নারকেল গাছের ফলন প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। একদিকে কাংখিত নারকেল উৎপাদন না হওয়া ও প্রতি পিস শুকনা নারেকেলের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় হওয়ায় এক এক করে ৯৯টি অটো তেলের মিল ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মাত্র ১০টি কোকোনাট অয়েল মিল ধুকে ধুকে চলছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া বাগেরহাটের সববৃহত গ্রান্ড অটো নারকেল তেল মিলের মালিক স্বপন কুমার বসু জানান, বাগেরহাটে এখন বলা চলে নারকেল উৎপাদন হচ্ছেনা। যাও উৎপাদন হচ্ছে তার ৯০ শতাংশই কৃষকরা শুকনো বা ঝুনা হবার আগেই কচি ডাব নারকেল হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কৃষকরা অল্প সময়ে ডাব বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছে। অবশিষ্ট শুকনো বা ঝুনা নারকেল প্রতিপিচ গড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার উপরে। এক লিটার তেল উৎপাদন করতে গড়ে ১২টি নারকেলের প্রয়োজন হয়। নারকেলের দামসহ উৎপাদন খরচ মিলে দাম পড়ে যায় প্রায় ১৫০০ টাকা। বাজারে উৎপাদিত তেলের এই দাম না পাওয়ায় ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে ৯৯টি অটো অয়েল মিল। এখন চালু থাকা ১০টি অয়েল মিল ধুকে ধুকে চলছে। এসব মিলও যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাবে।
বাগেরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মো. শরীফ সরদার জানান, এ জেলায় উৎপাদিত নারকেলকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে গড়ে উঠেছিল ১০৯টি আটো অয়েল মিল। পোকার আক্রমনে নারকেল উৎপাদনে ধ্বস ও নারকেলের উচ্চমূল্য থাকায় অধিকাংশ অটো অয়েল মিলগুলো উৎপাদন খরচ উঠাতে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীতে মাত্র ১০টি অটো অয়েল মিল ধুকে ধুকে চলছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মোতাহার হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে বাগেরহাট জেলায় নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছি ব্যাপক ভাবে আক্রমন করেছে। এটি আসলে ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয়। বর্তমানে এজেলায় নারকেলের ফলনে আশংঙ্কাজন হারে কমেগেছে। কৃষি বিজ্ঞানী এসে সরোজমিনে বিষয়টি পর্যাবেক্ষণ করে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার (আইপিএম) মাধ্যমে পোকা দমন পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এই পোকা দমনে আইপিএমের সঠিক গাইড লাইন এখন পর্যন্ত হয়নি। বিমানের মাধ্যমে অষুধ ছিটিয়ে পোকা দমন করা সম্ভব হলে আবারো নারকেল উৎপাদনের সোনালী সময় ফিরে আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি করেন।