জুয়েল হাসান,গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের সড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জেলার মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫১ জন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। দ্রুতগতি, অদক্ষ চালক ও অবৈধ যান চলাচলকেই দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য আঞ্চলিক সড়ক। এ সড়কগুলোতে প্রতিদিন ঘটছে বড়-ছোট অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনা। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গত ৬ মাসে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের এবং আঞ্চলিক সড়কগুলোতে প্রায় ৮০টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ৫১ জন।
এর মধ্যে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গোপালগঞ্জ অংশে ৭০ কিলোমিটারে ২৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯ জন আর আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশে ৪টি দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ২২ জন। মামলা হয়েছে ৩টি। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ২৫টি দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭টি।
কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান এবং পুলিশ সুপারের কার্যালয় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা বলেন, গোপালগঞ্জে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ছোট-বড় কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে অদক্ষ বাস চালক আর দ্রুত গতির কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। যদি অদক্ষ চালকদ্বারা গাড়ি চালানো বন্ধ আর গতি কমানো যায় তাহলে হয়ত কিছুটা সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। অবৈধ নসিমন চলাচল এবং সড়ক ও মহাসড়কের অপরিকল্পিত বাঁকে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রোধে সড়ক-মহাসড়কে সাইনবোর্ড টানানো ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক বিভাগকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গাড়ির চালক বলেন, শুধু পথচারীদের নয়, আমাদের চালকদেরও নানা সমস্যা এবং দোষ রয়েছে। আমরা ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকি। সেই সঙ্গে অনেক চালকের সঠিক লাইসেন্স নেই। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তবে প্রশাসন যদি সঠিকভাবে তাদের কাজ করতে তাহলে লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক গাড়ি চালাতে পারতো না।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে আমরা মহাসড়কে নিয়মিত টহল দিয়ে মহাসড়কে চলাচলকারী দ্রুতগতির যানবাহনকে জরিমানা করছি। যাতে তারা মহাসড়কে সঠিক নিয়মে যানবাহন চালিয়ে থাকেন। এছাড়া চালকদের দক্ষতা বাড়াতে চালকদের নিয়ে সভা করা হচ্ছে। এসব করার পরেও উদাসীনতার কারণে মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। তারপরেও হাইওয়ে পুলিশ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।