জুয়েল হাসানঃ গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন । এরমধ্যে একজন পরীক্ষার্থীও সকল বিষয় পাস করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত ঢাকা বোর্ডের এসএসসি ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে। বিদ্যালয়ের ফলাফল তালিকা অনুযায়ী, ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনও সব বিষয়ে পাস করতে পারেনি। তিনজন শিক্ষার্থী একটি বিষয়ে, পাঁচজন দুই বিষয়ে, সাতজন তিন বিষয়ে, একজন চার বিষয়ে এবং একজন সব বিষয়ে ফেল করেছে।
জানা গেছে, উপজেলার ৩৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৮টি বিদ্যালয় থেকে ১ হাজার ২৮৯ জন পরীক্ষার্থী পাস করেছে। কিন্ত একমাত্র শ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে একজনও পাস করতে পারেনি। বিদ্যালয়টিতে বর্তমান ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১২০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ৭ জন শিক্ষক রয়েছেন এবং বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত। ফল বিপর্যয়ের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।
স্থানীয় শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল জানান, তাঁর মেয়ে এ বছর ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত সময়মতো আসেন না। কেউ কেউ বেলা ১১টার দিকে এসে স্বাক্ষর করে চলে যান। কেউ কেউ থাকলেও তারা চায়ের দোকানে আড্ডা দেন। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর প্রতি তাদের আগ্রহ নেই।
এলাকার বাসিন্দা পারভেজ মুন্সী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ স্কুল থেকে কেউ পাস করেনি। এটা আমাদের এলাকাবাসীর জন্য খুবই লজ্জার ও দুঃখজনক। শিক্ষকরা ঠিক মতো ক্লাস নেন না। তারা এলাকার ‘গ্রাম্য রাজনীতির’ সাথে জড়িত। এলাকায় দুটি গ্রুপ রয়েছে। শিক্ষকরাও দু’গ্রুপে বিভক্ত। শিক্ষকদের কিছু বললে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এছাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। শিক্ষকদের গাফিলতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।’
প্রধান শিক্ষক জগবন্ধু বিশ্বাস বলেন, স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কম। অভিভাবকরা অসচেতন। আমরা অভিভাবকদের একাধিকবার ডাকলেও তারা স্কুলে আসেনি। এছাড়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে এবার হয়তো অটো পাস দিতে পারে এ ধারণা থেকে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করেনি। আশা করি আগামী এ ধরণের আর হবে না। বদনাম ঘুচাতে পারবো।
গণিত শিক্ষক গোপাল বিশ্বাস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নেই। অবকাঠামো সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেও আমরা সাতজন শিক্ষক অনেক কষ্টে পাঠদান অব্যাহত রেখেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম বলেন, যেটা হয়েছে খুবই দুঃখজনক। শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত মোবাইল আসক্ত এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি অনাগ্রহ। তবে স্কুলের শিক্ষকদের পাঠদান ও শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ফল বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।