তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ জাকির হোসেন-টুটুল।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রামের জয়দুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম ছিলেন (ইউপির) ৯- নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
জুলাই -২৪ এর ছাত্র জনতার আন্দোলনে/ গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলেও, ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয় নাই দেশ।
গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রামের যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলামের এখানো দাপট কমেনি, তার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মহব্বতপুর গ্রামের জয়দুল ইসলাম ও তার পুত্র যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম বাপ-বেটা সিন্ডিকেট করে এলাকার খাস পুকুর দখল, খাস জমি বিক্রয় ও কথিত মাজার নিয়ন্ত্রণ করে লাখ, লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সন্ধ্যা হলেই ওই মাজারে গাঁজার আসর চলে গভীর রাত পর্যন্ত্য। মাজারে গাঁজা সেবন বন্ধ ও মাজারের ১৫- বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেবে চাওয়ার কারণে নবাব আলী নামের একজনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। মাছ- মারা মোড়ে ভান্ডারী দরবার শরিফ নামে একটি মাজার রয়েছে, ওই মাজার দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর নিয়ন্ত্রণ করেছেন যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম। প্রতি বছর মাজারে ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। ওরশে ভক্তদের কাছে থেকে অনুদান হিসেবে কমপক্ষে দু’লাখ টাকা করে আদায় হয়। মাজারে গাঁজা সেবন বন্ধ ও আয়-ব্যয়ের হিসেব চাইলে শরিফুলের সঙ্গে নবাব আলীর বিরোধ সৃষ্টি হয়।
গত ২৩- জুলাই গভীর রাতে যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলামের মদদে জয়দুল, ওলিউল, বনো রবিউল ও সাগরসহ বেশ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নবাব আলীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও মারপিট করে গুরুতর জখম করে রাস্তায় ফেলে রাখে। খবর পেয়ে নবাবের পরিবারের সদস্যরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসা করান।
জানা গেছে, মাটিকাটা ইউপির মহব্বতপুর মৌজায়, ১ নং খতিয়ানভুক্ত ৩০, ৩২ ও ৩৩ নম্বর দাগে ৮১ শতক সরকারি খাস জমি রয়েছে। জয়দুল ও তার ছেলে ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি, শরিফুল ইসলাম সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লেখাপড়া করে এসব খাস জমির সিংহভাগ অংশ বিক্রয় করে লাখ, লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত সুগান দিঘীর ২নং দাগে ১৫ শতক জমি আব্দুর রশিদের কাছে বিক্রয় করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জয়দুল আলী।
আব্দুর রশিদ বলেন, তার কাছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বিক্রয়ের কথা বলে খাস জমি দিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন জয়দুল ইসলাম। তিনি জয়দুলের শাস্তি ও টাকা ফেরত চান।
অন্যদিকে ইউপির মহব্বতপুর মৌজায় ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত ১১৮ নং দাগে ৯ বিঘা জমি রয়েছে।বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জয়দুল ও শরিফুল তারা বাপ-বেটা, এলাকার রিয়াজুল ও আনারুলের কাছে থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের কাছে ১০ কাঠা করে জমি বিক্রয় করে দিয়েছেন।
রিয়াজুল ও আনারুল বলেন, তাদেরকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দেখিয়ে খাস জমি দিয়ে প্রতারণা করেছেন জয়দুল ও শরিফুল।এছাড়াও মাছ-মারা মৌজায় ৩টি, হাউসপুর মৌজায় ২টি ও কুড়লবাড়িয়া মৌজায় ১টি’সহ, বিভিন্ন এলাকায় সরকারি খাস পুকুর দখল করে নিয়ে আছেন শরিফুল ইসলাম। এমনকি তিনি খাস পুকুর দখল করে মাছ লুট করেছেন। এঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মাছ লুটের মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, এমন অভিযোগ তার কাছে আসেনি। তিনি বলেন, অভিযোগ হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব জমি ২নং খাস খতিয়ানভুক্ত বিনিময় মুলে কয়েকজনকে পজিশন দেয়া হয়েছে, এর সঙ্গে নয়মুদ্দিনও সম্পৃক্ত রয়েছে, এখন তাকে ফাঁসানোর জন্য তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, খাস পুকুর দখল, খাস জমি বিক্রি ও মাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা।