
এসডি সোহেল রানা, স্টাফ রিপোর্টার:
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা মালাকোচা এলাকায় বন্যহাতির পাল তাণ্ডব চালিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে পাহাড়ি কৃষকদের আবাদি ফসল। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্যহাতির দল আক্রমণ চালায় ধানক্ষেত ও অন্যান্য ফসলের জমিতে। এতে রাতের পর রাত জেগে ফসল পাহারায় থাকতে হচ্ছে কৃষকদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে এখন ধান পাকার মৌসুম চলছে। জমিতে ধান পেকে সোনালী রঙ ধারণ করেছে। ঠিক সেই সময় বন্যহাতির দল নেমে এসে ধান খেয়ে ও পিষে ব্যাপক ক্ষতি করছে। প্রায় ১৫ থেকে ২০টি বন্যহাতির একটি পাল নিয়মিতভাবে মালাকোচা ও আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়ছে। এতে কৃষকদের সারা বছরের কষ্টের ফসল মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
এলাকার কৃষকরা জানান, তারা প্রতিরাতে মশাল, বাঁশের টুকরা, টিন বাজিয়ে, হইচই করে হাতির দলকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। অনেকে দল বেঁধে রাতভর পাহাড়ের ধারে ও ক্ষেতের চারপাশে অবস্থান নেন। তবুও বন্যহাতিরা ভয় না পেয়ে মাঝেমধ্যে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ফসল খেয়ে ও পিষে ব্যাপক ক্ষতি করে। এতে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পাহাড়ি কৃষকরা জানান,
“আমাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এই ধান চাষ। কিন্তু হাতির দল প্রতিদিনই এসে ফসল খেয়ে যাচ্ছে। রাতজেগে পাহারা না দিলে সব শেষ হয়ে যাবে। এখন ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারছি না।”
“আমরা দল বেঁধে রাতভর পাহারা দিচ্ছি। মশাল জ্বালিয়ে ও বাঁশি বাজিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করি। তবুও মাঝে মাঝে একাধিক দিক দিয়ে হাতির দল হঠাৎ আক্রমণ করে বসে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বন্যহাতির তাণ্ডব রোধে বনবিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। কৃষকরা চায় বন্যহাতিকে ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধা ব্যবস্থা, আলোক ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় টহল ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক।
শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী এই মালাকোচা এলাকা ভারতীয় পাহাড়ের পাদদেশে হওয়ায় প্রায় প্রতি বছরই বন্যহাতির পাল খাদ্যের সন্ধানে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ফসল নষ্ট করে। কিন্তু এ বছর হাতির তাণ্ডব আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এদিকে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত বন্যহাতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে এই অঞ্চলের ধান ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে এবং চাষাবাদে নির্ভরশীল শত শত পরিবার মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়বে।
স্থানীয় জনগণ ও কৃষক সমাজ বনবিভাগ ও প্রশাসনের নিকট দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যাতে বন্যহাতির তাণ্ডব বন্ধ করে কৃষকের ধান ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়।